মাহমুদুল হকের জীবন আমার বােন’ (১৯৭২) উপন্যাসে হানাদার বাহিনীর আক্রমণের চাইতে এখানকার তরুণদের রাজনীতি সম্পর্কে তাদের বিবেচনাহীন আবেগ এবং কয়েকটি তরুণ-তরুণীর অবদমিত যৌন ইচ্ছার কথা চিত্রিত হয়েছে।
মাহমুদুল হকের ভাষা এ গ্রন্থে চরিত্রানুগ, পরিবেশানুগ, প্রাণবন্ত। খােকা ও তার বন্ধুদের চরিত্রের মতাে মাহমুদুল হকের ভাষাও অস্থির, চঞ্চল ও দ্রুতলয়ের। ভাষা সর্বত্র টগবগে, ঘােড়ার মত লাফিয়ে এক প্রকার দৌড়িয়ে চলেছে এ ভাষা।
সারা শহর ফেটে পড়েছে বারুদের মতাে। স্টেডিয়ামে চেয়ার ভাঙাভাঙি, দোকানপাট সব বন্ধ, রাস্তায়-রাস্তায় কেবল মানুষ আর মানুষ। লাঠি সােটা, লােহার রড পাইপ যে যা হাতের কাছে পেয়েছে তাই নিয়ে ছেলে বুড়াে জোয়ানে সব ঘর ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছে উন্মত্তের মতাে। শ্লোগান আর শ্লোগান, চতুর্দিকে ফেটে পড়েছে শ্লোগানে। হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে ২৭ মার্চের পরে বােন রঞ্জুকে নিয়ে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে ওপারে গিয়ে উঠেছিল সে। বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে থৈ থৈ মানুষ যে যার নিজেকে সামলাতে ব্যস্ত। শিলাবৃষ্টির পর জ্বরে রঞ্জুর গা পুরে যাচ্ছিল। তারপর সেখানেই মেশিনগান আর মর্টার নিয়ে পলায়নরত ভীত সন্ত্রস্ত নরনারীর ওপর পাশবিক উল্লাসে ঝাপিয়ে পড়েছিল হিংস্র সেনাদল অতর্কিতে। সেদিন বাকশক্তিহীন, অসুস্থ শায়িত রঞ্জু তিন লক্ষ চল্লিশ হাজার পায়ের তলায় পড়ে চ্যাপটা হয়েছিল। একা বেঁচে থাকার অধিকার তার দেশ কিছুতেই দিতে পারে না রঞ্জুকে, পরে বুঝেছিল খােকা। খােকাদের এই চৈতন্যোদয়ই পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধকে তীব্র গতিদান করেছিল। জীবন আমার বােন’ উপন্যাসে ব্যবহৃত ভাষা ও রূপকল্পে এক বিচিত্র জগৎ লক্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup