নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ জোছনা ও জননীর গল্প’ (২০০৫) উপন্যাসে তিনটি কাজ করেছেন। প্রথমত, তার নিজের ভাষায় দেশমাতার ঋণ শােধ করার চেষ্টা করেছেন। দ্বিতীয়ত, একটি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপন্যাস লিখেছেন এবং তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছু বিভ্রান্তি দূর করার চেষ্টা করেছেন।
এ উপন্যাসের কাঠামােটি খুবই আকর্ষণীয়। গল্পটি শুরুতে নীলগঞ্জ হাইস্কুলের আরবি শিক্ষক মওলানা ইরতাজউদ্দিন কাশেমপুরির। এটি ঘটনার পারম্পর্যে নানাভাবে এগিয়ে চলে। পরাধীন দেশে জুম্মার নামাজ হয় না, জুম্মার নামাজ পড়াতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এই কারণে ক্যাপ্টেন বাসেত তাকে নীলগঞ্জ স্কুল এবং বাজারে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় প্রদক্ষিণ করায়। বাজারে ছােট্ট একটা ঘটনা ঘটল। দরজির দোকানের এক দর্জি একটা চাদর নিয়ে ছুটে এসে ইরতাজউদ্দিনকে ঢেকে দিয়ে জড়িয়ে ধরে থাকল। ঘটনা এতই দ্রুত ঘটল যে সঙ্গের মিলিটারিরা বাধা দেবার সময় পেল না।
ইরতাজউদ্দিন ও দরজিকে মাগরেবের নামাজের পরে সােহাগী নদীর পারে নিয়ে গুলি করা হলাে। মৃত্যুর আগে ইরতাজউদ্দিন পরম নির্ভরতার সঙ্গে আল্লাহপাকের কাছে উঁচু গলায় শেষ প্রার্থনা করল। পরদিন নীলগঞ্জ স্কুলের হেড মাস্টার মনসুর সাহেব ও তার পাগল স্ত্রী আসিয়া ইরতাজউদ্দিনের লাশ টেনে আনার সময় বেলুচ রেজিমেন্টের সেপাই আসলাম খা তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। আসলাম চরিত্রটির মাধ্যমে লেখক বুঝিয়েছেন পাকিস্তান আর্মিতেও দুএকজন হৃদয়বান লােক ছিল।
এ উপন্যাসে চরিত্র হয়ে এসেছেন মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, ইন্দিরা গান্ধী, ইয়াহিয়া খান, ভুট্টো, টিক্কা খান অর্থাৎ সেই সময়কার সব শ্রদ্ধেয় ও নিন্দিত মানুষজন। ভারতীয় বাহিনীর চরিত্ররা এসেছে যে যার ভূমিকায়। মুক্তিযােদ্ধারা এসেছে, রাজাকাররা এসেছে। শর্সীনার পীর সাহেব এসেছেন আর এসেছে সমগ্র দেশের নানাস্তরের নানারকম মানুষ।
বিভিন্ন স্মরণীয় উদ্ধৃতি তুলে ধরা হয়েছে এ উপন্যাসে। বিভিন্ন চরিত্র, বিভিন্ন ঘটনার কথা বলা হয়েছে। শাহেদ, আসমানী, জোহর, মােবারক, গৌরাঙ্গ, নাইমুল, মরিয়ম, শাহ কলিম, রুনি, বি হ্যাগি স্যার, ধীরেন্দ্র রায় চৌধুরী, কংকন। আর অতি ছােট্ট হারুন মাঝি। সে ছিল একজন ডাকাত। একটি উত্তাল সময় কিভাবে দেশের প্রায় প্রতিটি মানুষকে ঠেলে দিয়েছিল স্বাধীনতার দিকে, কিভাবে দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে মৃত্যুকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিল মানুষ এই উপন্যাসের পাতায় পাতায় ছড়ানাে আছে সেই কথা ।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup