নবনাট্য আন্দোলনের প্রথম পুরােহিত বিজন ভট্টাচার্যের নবান্ন (১৯৪৪) নাটক মূলত ১৯৪৩ সালের (বাংলা ১৩৫০) মন্বন্তরের পটভূমিতে রচিত।
পঞ্চাশের মন্বন্তরের পটভূমিকায় গ্রাম বাংলার কৃষক সমাজের দুঃখ-দুর্দশা এবং তাদের সংগ্রামের ব্যর্থতা ও সফলতার আলেখ্য অবলম্বনে এ নাটকটি রচনা করেন। কিন্তু মন্বন্তরের সংকটকে গভীরতর করতে নাট্যকার সাইক্লোনকে কল্পনা করেছেন এবং ১৯৪২- এর অক্টোবর বিপ্লবের ঘটনাবলিকে মন্বন্তরের পটভূমিতে স্থাপন করেছেন। কেননা, সে সময় রাজনৈতিক আন্দোলনও তীব্রতর হয়।
১৯৪২-এর অক্টোবরে বিপ্লবীদের দমন করতে সৈন্যবাহিনী, পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিট এ অঞ্চলে নেমে পড়ে। ব্যাপক হারে গ্রেপ্তার করা হয়। তদুপরি খবরে প্রকাশ, সরকারি সৈন্যরা গ্রামের নারী ধর্ষণ ও লুটপাট করে। আবার ১৯৪২ সালের ১৬ অক্টোবর এক সাইক্লোন ও আনুষাঙ্গিক বান পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যার সমগ্র পটভূমি জুড়ে আছড়ে মেদেনীপুর ও কাছাকাছি জেলাগুলােতে যে ক্ষতি হয়, তার পাশে রাজনৈতিক নিষ্পেষণও ম্লান হয়ে যায়। গ্রামের লােক কলকাতায় খাদ্যের সন্ধানে এসে ধন প্রাণ ইজ্জত হারায় এবং এখানকার নির্দয় ভদ্রলােকেরা যে পরিমাণ ফ্যান দেয় তার চেয়েও অনেক পরিমাণ তাদের মান নষ্ট করে।
নাটকে লেখক মানুষের মানবিক সত্ত্বার অধঃপতনকে উপস্থাপন করেছেন নিখুঁতভাবে। ভারতের বড়লাট লর্ড ওয়াভেল কলকাতার রাস্তার দৃশ্য পৃথিবীর লােকের কাছে লুকিয়ে রাখার জন্য দুর্ভিক্ষপীড়িত লােক যারা কলকাতায় এসেছিল তাদেরকে পুলিশের গাড়িতে তুলে গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত সরকারি রিলিফ ক্যাম্পে পাঠাতেন।
প্রধান সমাদ্দার, কুঞ্জ, নিরঞ্জ, পঞ্চাননী, হারুদত্ত, রাধিকা ও দয়াল এ নাটকের উল্লেখ্যযােগ্য চরিত্র।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup