‘প্রেম, প্রকৃতি ও স্বদেশভূমি’ নিজের কবিতার বিষয়বস্তু বলে আল মাহমুদ নিজেই স্বীকার করেছেন। ‘সােনালী কাবিন' (১৯৭৩) কাব্যে ‘ নিজের ঐতিহ্য বিশ্বাস, স্বপ্ন ও সংকল্পকে উন্মোচিত করে কবি তার মাধ্যমে উপস্থাপিত করেছেন এক নবীন নায়ককে- যার স্বপ্ন প্রেমময় শ্রেণিহীন সমাজের প্রতিষ্ঠা করা।
সােনালী কাবিন’ কবিতাটি বেশ দীর্ঘ। উত্তম পুরুষের জবানিতে তা লেখা। এ কবিতায় কবি তার প্রণয়িনীকে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কবি নিজের ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আদর্শ, স্বপ্ন ও সংকল্পের বর্ণনা করেছেন ক্রমাগতভাবে। এভাবে তিনি কাবিননামা তৈরি করেছেন।
এর মাধ্যমে অনার্য কৌম সমাজের বলিষ্ঠ জীবনবাদ, সবল পৌরুষ, তীব্র স্বাধীনতাস্পৃহা, নিঃসঙ্কোচ দেহদানুভূতি, সাম্যের ঐতিহ্য ও প্রগাঢ় প্রেমাকৃতির সমন্বয়ে চর্যাপদ-মুকুন্দরাম-আলাওল-হিউ এন সাংয়ের লােকায়ত বাংলা প্রাণপদ্মের মত উদ্ভিন্ন হয়েছে এক নায়কের।
গ্রন্থে বিভিন্ন শিরােনামের কবিতার সঙ্গে ‘সােনালী কাবিন' নামে চৌদ্দটি সনেটের সমন্বয়ে একটি দীর্ঘ কবিতাও অন্তর্ভুক্ত। এটিকে একটি ক্ষুদ্র কাব্যগ্রন্থও বলা যেতে পারে। বলা যেতে পারে, বীজ কাব্যগ্রন্থ।
অন্য কবিতাগুলাে : জাতিস্মর, পালক ভাঙার প্রতিবাদে, ক্যামােফ্লাজ, শােণিতে সৌরভ, তােমার আড়ালে ইত্যাদি।
পুরাে কাব্যগ্রন্থটিতে বঞ্চিতের ক্ষোভ, শ্রমিকের ঘাম, কৃষকের পরিশ্রম গ্রামীণ আবহে উঠে এসেছে। সােনালী কাবিনে’র কবিতাগুলাে রচিত হয় ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে।
জসীমউদ্দীন যেখানে লােক সাহিত্যের উপাদানের উপর তার কুটির তৈরি করেন, আল মাহমুদ সেখানে আধুনিক এক প্রসাদের কারুকার্যে লৌকিক উপাদান ব্যবহার করেন। কেননা, আল মাহমুদ অত্যন্ত সংবেদনশীল, সচেতন ও বিদগ্ধ শিল্পী; তার উপলব্ধির গভীরতা জসীমউদ্দীনের তুলনায় অতলস্পর্শী। তদুপরি অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত-ছন্দের এই ত্রিবিধ চলনেই তার সচ্ছন্দ বিহার অনেকের কাছে ঈর্ষার বিষয় হতে পারে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup