কথাসাহিত্যিক, অভিধানকার আবু ইসহাকের সাড়া জাগানাে 'সূর্য-দীঘল বাড়ী’ (১৯৫৫) উপন্যাসে উপস্থাপিত হয়েছে পঞ্চাশের মন্বন্তর, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, দেশবিভাগ, স্বাধীনতা’, প্রাপ্তির স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ এবং দুর্ভিক্ষলাঞ্ছিত উন্মূলিত অস্তিত্ব মানুষের জীবন সংগ্রামের ভয়াল রূপ।
পঞ্চাশের মন্বন্তর থেকে দেশবিভাগ- এই পাঁচ বছরের সময় পরিসরে এ উপন্যাসের ঘটনাংশ বিস্তৃত হলেও জয়গুণ-পরিবারের জীবনান্বেষার স্বরূপ উন্মোচনই ঔপন্যাসিকের লক্ষ্য।
প্রকৃত অর্থে, বাংলাদেশের সহায়-সম্বলহীন গ্রামীণ মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার নির্মম অভিযাত্রা বিধৃত হয়েছে এ উপন্যাসে। বিশেষত গ্রামীণ মুসলমান জীবনের বিশ্বস্ত এবং আন্তরিক পরিচয় সমকালীন বাংলা সাহিত্যে বিরল। প্রকাশের অব্যবহিত পর থেকে বাস্তব চিত্রণ, চরিত্রায়নের স্বাভাবিকতা ও প্রকাশভঙ্গির ঋজুতার জন্য উপন্যাসটি সমালােচক ও পাঠকসমাজে প্রশংসিত হয়েছে।
দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মন্বন্তরের ফলে সৃষ্ট নানা দুর্নীতি এবং বিধ্বস্ত হওয়া মানবিক মূল্যবােধ এই উপন্যাসের পটভূমি।
জয়গুণদের বাড়িটিতে রাতে কথিত ভূতের ঢিল পড়ে, সে বাড়িতে নির্ভয়ে থাকা যায় না। তাই সূর্য-দীঘল বাড়ি অমঙ্গলের প্রতীকে পরিণত হয়। উপন্যাসে গ্রামের মানুষের দারিদ্র্য, কুসংস্কার, মােড়ল ও মােল্লাদের দৌরাত্ম্য, হৃদয়হীনা শাশুড়ির বৌয়ের প্রতি অত্যাচার ইত্যাদি এমন বিশ্বস্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যে কারণে এটি হয়ে উঠেছে গ্রামীণ জীবনের যথার্থ উপস্থাপনা।
বস্তুত এ উপন্যাসে জয়গুণ-পরিবারের জীবন সংগ্রামের মাধ্যমে উন্মােচিত হয়েছে পূর্ববাংলার দুর্ভিক্ষপীড়িত অন্ধ ধর্মবিশ্বাসে জর্জরিত সমাজবাস্তবতা এবং গ্রামীণ পরিবার জীবনের বাস্তব প্রতিচ্ছবি।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup