শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান কথাসাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রকার হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করে বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে একটি উজ্জ্বল আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন।
উপন্যাস রচনায় জহির রায়হান উর্ষপূর্ণ প্রতিভার পরিচয় দিয়ে গেছেন। তার হাজার বছর ধরে (১৯৬৪) শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পুরস্কৃত। বাংলার পল্লীর পরিসরে যে জীবনধারা প্রবাহিত হয়ে আসছে তারই রসমধুর বাস্তবচিত্র এই উপন্যাসটি
লেখকের আকর্ষণীয় বর্ণনাভঙ্গি পাঠককে সহজেই বিমুগ্ধ করে। এই উপন্যাস সম্পর্কে ড. রফিকউল্লাহ খান মন্তব্য করেছেন, বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনবাস্তবতার সুদীর্ঘ পরিসর উপজীব্য হিসেবে গৃহীত হয়েছে জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে উপন্যাসে।
জীবনের এই আয়তন-কল্পনার পেছনে ঔপন্যাসিকের রােমান্টিক মন-মানসিকতার ভূমিকা মুখ্য। যে কারণে, আবহমান বাংলা ও বাঙালির চলমান জীবনরূপ আবেগী শব্দরূপায়ণের মধ্যেই হয়ে পড়েছে সীমাবদ্ধ। তবে দৃষ্টিভঙ্গির অন্তর্ময় বিন্যাসে হাজার বছরের মন্থর জীবনস্রোতের মধ্যেও তরঙ্গিত হয়েছে মানবীয় আশা-আকাঙ্ক্ষা- অচরিতার্থতা-বেদনার রূপ-বৈচিত্র্য।
উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র টুনি। আনন্দ-উচ্ছল এই গ্রামীণ মেয়েটির সংসার শুরু হয়েছিল বুড়াে মকবুলকে নিয়ে। নারী জীবনের দুর্গতির বােঝা বয়ে চলা জীবনে যুবক মন্তু যে আলােড়নের সৃষ্টি করেছিল তাতে টুনি চরিত্রের স্বরূপ লক্ষ করা যায়। মন্তু ও টুনির মনের গতিপ্রকৃতি নির্ণয়ই উপন্যাসের প্রধান দিক। টুনির চরিত্রটি লেখক অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে চিত্রিত করেছেন।
তবে উপন্যাসটির মধ্যে চিরন্তন গ্রামবাংলার এক অনবদ্য আলেখ্য অঙ্কিত হয়েছে। এখানে চরিত্রগুলাে আবহমান বাংলাদেশের মানুষের অকৃত্রিম পরিচয় তুলে ধরেছেন। কালের পরিবর্তনের ছাপ গ্রামীণ জীবনে পড়ে নি। সে জীবন যেন বরাবরের মতােই বয়ে গেছে। গ্রামীণ জীবনের চিরসঙ্গী দারিদ্র্য, ঝগড়া বিবাদ যেন অপরিবর্তনীয়ভাবে দেখা দিয়েছে। ভালােবাসার চিরন্তন রূপটিই এখানে প্রত্যক্ষ করা যায়। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের একটি চিরন্তন রূপ উপন্যাসে অত্যন্ত সহজ সরলভাবে ফুটে উঠেছে।
লেখক মনােমুগ্ধকর ভাষায় গ্রামের তথা নারী জীবনের এক মর্মন্তুদ চিত্র অঙ্কন করেছেন। বর্ণনার আকর্ষণীয়তা এবং চরিত্র চিত্রণের দক্ষতা এ উপন্যাসটিকে সার্থক সৃষ্টির পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup