মূলভাব :ধনসম্পদ টাকা-পয়সা বাড়ানোর আকাক্সক্ষা মানুষের দুর্নিবার। তাই আকাক্সক্ষা মানুষকে লোভী করে তোলে। শত অর্জনের পরও তারা তৃপ্ত হয় না। তখন তারা গরিবের সামান্যতম সম্পদটুকু গ্রাস করে নিতে পিছপা হয় না।
ভাব সম্প্রসারণ : ধনসম্পদ উপার্জনের অদ্ভুত রকমের তৃষ্ণা মানুষকে ক্রমাগত তাড়িত করে। যে যত পায় সে তত চায়। এই চাওয়া এবং পাওয়ার কখনো শেষ নেই। রাশি রাশি সম্পদ জমিয়ে সম্পদের পাহাড় তৈরি করে মানুষ। তারপরও সে তৃপ্ত হয় না। সম্পদ বাড়ানোর নেশায় সে দুর্দমনীয় হয়ে উঠে। ভালো-মন্দ, কল্যাণ-অকল্যাণ, সত্য-মিথ্যা ইত্যাদি জলাঞ্জলি দিয়ে বিত্ত ও বৈভবের মোহে সে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলে। নির্বিচারে সম্পদ সংগ্রহের ফলে সে গরিবের সামান্য সম্পদের প্রতি হাত বাড়ায়। গরিবের শেষ সম্বলটুকু কেড়ে নিয়ে সে তার প্রাচুর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলতে হয়। অন্য দিকে অনাহারক্লিষ্ট গরিব মানুষেরা তাদের সামান্য সম্বল নিয়ে নিরিবিলি জীবনযাপন করে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য তাদের নিত্যদিনের সহচর। ধনীর ঐশ্বর্যের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্র আগ্রহ থাকে না। রাজা-মহারাজাদের বিলাসবহুল জীবনের খবরাখবর তারা কখনো রাখে না। কোনো রকমে খেয়ে-পরে বাঁচার মধ্যেই তারা শান্তি খুঁজে নিতে চায়। কিন্তু, এইটুকু সুখ আর এইটুকু শান্তিতেও বাধা সৃষ্টি করে উঁচু তলার ধনিক স¤প্রদায়। তাদের অপরিসীম ধনতৃষ্ণা একসময় গ্রাস করে গরিবের শেষ সম্বল ভিটে বাড়ি। ছলে-বলে-কৌশলে অথবা শক্তি খাটিয়ে, ভুখা-নাঙা মানুষের শেষ সম্বলটুকু ছিনিয়ে এনে এরা ভয়ংকর লোভের আগুনে নিজেদেরকে আত্মাহুতি দেয়। এভাবেই দরিদ্র মানুষেরা পরিণত হয় পথের ভিক্ষুকে।
মন্তব্য : শোষিত-বঞ্চিত দুঃখী মানুষের ক্রন্দনধ্বনি আর দীর্ঘ নিশ্বাসে ভারী হয়ে উঠছে পৃথিবীর বাতাস। এজন্য প্রয়োজন সম্পদের সুষম বণ্টন ও ন্যায্য হিসাব। সামন্তবাদী আর পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থার ফলে দরিদ্র মানুষের ওপর নেমে এসেছে যে অমানিশার কালো অন্ধকার, তার অবসান হওয়া উচিত।