মূলভাব : মনই মানুষকে অন্যান্য প্রাণী থেকে আলাদা করেছে। মনই মানুষকে পশুত্ব থেকে মনুষ্যত্বে গৌরব দান করেছে।
ভাব সম্প্রসারণ : মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণ হলো মানুষের একটা সুন্দর, অনুভ‚তিপ্রবণ মন আছে, যা আর কোনো প্রাণীর নেই। পৃথিবীরতে যত প্রকার জীব আছে, তাদের প্রত্যেকেরই প্রাণ রয়েছে। এদিক থেকে বিবেচনা করলে মানুষ আর দশটা প্রাণীর মতোই একটা প্রাণী। তবে মনোজগতের বৈশিষ্ট্যের কারণেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী থেকে একেবারেই আলাদা। মন আছে বলেই মানুষের মধ্যে প্রেম আছে, কল্পনা আছে, সৌন্দর্যবোধ আছে, ধর্ম আছে। পৃথিবীর সকল পাপ-পুণ্য, ভালো-মন্দ, ধর্ম-অধর্মের পার্থক্য নির্ধারণে মানুষকে পরিচালিত করে তার মন। এ মন বা হৃদয় দ্বারা পরিচালিত হয়ে মানুষ সৎ কাজ করে এবং শিক্ষা, সাধনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানবিক গুণাবলি আয়ত্ত করে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে। তখন অন্যান্য প্রাণী থেকে সে আলাদা হয়ে যায় এবং দৈনন্দিন জীবনের দ্ব›দ্ব-সংঘাত, হিংসা-বিদ্বেষ, লোভ-লালসা, স্বার্থচিন্তা, কুমন্ত্রণা প্রভৃতির সংস্পর্শ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখে। মনের শক্তির কারণেই মানুষ আজ সভ্যতার চরম শিখরে পৌঁছতে পেরেছে। মানুষ তার মন দিয়ে সাধনা করে জীবনের বিচিত্র বিকাশ ঘটায়, যা অন্য কোনো প্রাণী পারে না। আবার কোনো প্রাণীই নিজেকে জানে না, কিন্তু মানুষ নিজেকে জানে। আর এটা সম্ভব হয় তার মনের মাধ্যমেই। মনই তার রহস্যময় আয়না, মনই তাকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছে। তাই সকল প্রাণীর ওপরে মানুষের স্থান। যে মানুষের আকৃতি নিয়ে পশুসুলভ আচরণ করে, যার মধ্যে মানবতাবোধ, সত্যনিষ্ঠা, ঔদার্য, সৎবিবেচনাবোধ, বিবেক-বুদ্ধি ইত্যাদি নেই তাকে সত্যিকারের মানুষ বলা চলে না। তাই মানুষ হতে হলে শুধু প্রাণ থাকলেই চলবে না, প্রাণ ও মনের যুগপৎ বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটাতে হবে।
মন্তব্য : জীবজন্তুর সারা জীবন কেটে যায় কেবল আত্মরক্ষা, বংশরক্ষা ও খাদ্য সংগ্রহে। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষকেও একই কাজ করতে হয়। তা সত্তে¡ও মানুষ বিশিষ্ট, কারণ সে জ্ঞান, বুদ্ধি, বিদ্যা, হৃদয় ও সুকোমল বৃত্তির অধিকারী বলে।