বাঙালি মুসলিম সমাজে নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রােকেয়া অন্তঃপুরবাসিনী জীবন শুরু করলেও সামাজিক সীমাবদ্ধতার বেড়াজাল অতিক্রম করে বরণীয় স্মরণীয় হয়ে আছেন বিদ্যাচর্চায়, শিক্ষা সংগঠনে ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনে। তাঁর উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ হচ্ছে ‘পদ্মরাগ', 'অবরােধবাসিনী’ মতিচূর, সুলতানার স্বপ্ন' ইত্যাদি।
‘অবরােধবাসিনী’ (১৯৩১) রােকেয়া সাখাওয়াত হােসেনের একটি উল্লেখযােগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। কতগুলি ঐতিহাসিক ও চাক্ষুষ সত্য ঘটনার হাসি-কান্না নিয়ে এই গ্রন্থের কাহিনি রচিত।
রােকেয়া অবরােধবাসিনী-তে সাতচল্লিশটি ঐতিহাসিক ও চাক্ষুস সত্য ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। এসব বর্ণনায় তিনি ভারতবর্ষের নারীরা কীভাবে অশিক্ষা, অন্ধবিশ্বাস আর কুসংস্কারের দ্বারা আচ্ছন্ন হয়ে আছেন এবং এর ফলে তারা সময়ের জগতের কাছে কিরূপ হাস্যস্পদ হয়ে দাড়িয়েছেন তারই বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি লেখার শুরুতেই বলেছেন, আমরা বহুকাল হইতে অবরােধে থাকিয়া থাকিয়া অভ্যস্ত হইয়া গিয়াছি। সুতরাং অবরােধের বিরুদ্ধে বলিবার আমাদের বিশেষত আমার কিছুই নাই। মেছেনীকে যদি জিজ্ঞাসা করা যায় যে পচা মাছের দুর্গন্ধ ভাল না মন্দ? সে কি উত্তর দিবে? বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে রােকেয়া যেভাবে নারীদের দুর্দশার বর্ণনা দিয়েছেন তা পাঠে একদিকে যেমন হাস্যকর মনে হয়, অন্যদিকে তেমনি করুণারও উদ্রেক হয়।
ভারতবর্ষের বিবিসাহেবরা রাত্রিবেলা বাড়িতে চোর এলে পরে নিজেরা লুকিয়ে থেকে পর্দা রক্ষা করেছেন। বাড়ির সমস্ত জিনিস চুরি হয়ে যাওয়ার থেকে তাদের পর্দা অনেক বড় বিষয় ছিল তাদের কাছে। পাঠকদের কাছে আরও করুণ মনে হবে যখন তারা পড়বেন কীভাবে ঘরে আগুন লাগার পর পুরুষদের সামনে বের হওয়ার লজ্জা থেকে রেহাই পেতে একজন নারী খাটের তলায় লুকিয়ে থেকে আগুনে আত্মহুতি দিয়েছেন। পর্দার দোহাই দিয়ে একজন বােরকা পরিহিত নারীকে ট্রেনের তলায় পিষ্ট হওয়ার থেকে রক্ষা করা গেল না, তিনি ছিন্নভিন্ন হয়ে গেলেন। এ রকমের আরও অসংখ্য করুণ চিত্রের বর্ণনা দিয়েছেন রােকেয়া তার অবরােধবাসিনী শীর্ষক রচনায়।
এই লেখাগুলাে কলকাতার মাসিক মােহাম্মদী’র মহিলা পাতায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সাল থেকে ১৯৩০ সাল পর্যন্ত। ১৯৩১ সালে রােকেয়ার এই সৃষ্টিকর্ম ‘অবরােধবাসিনী’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup