বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে সবচেয়ে উচ্চমানের ও মৌলিক প্রতিভার অধিকারী মুনীর চৌধুরীর একাঙ্ক নাটক ‘কবর’ (১৯৫৩)। তাঁর একাঙ্কিকাগুলাের মধ্যে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় লেখা ‘কবর’ শ্রেষ্ঠ।
নাট্যকারের উদ্ভাবন ও নৈপুণ্য এর সর্বত্র প্রকাশিত। রাজনৈতিক চেতনার প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানি ঔপনিবেশিক শাসকশক্তির নিষ্ঠুর অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রথম শৈল্পিক নাট্য প্রতিবাদ এ নাটক।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থানকালে রণেশ দাশ গুপ্তের অনুরােধক্রমে মুনীর চৌধুরী ‘কবর’ রচনায় প্রবৃত্ত হন। জেলখানায় যাতে গােপনে অভিনীত হতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কবর লিখেছেন।
মঞ্চটাকে দু’ভাগে ভাগ করে নিয়ে হারিকেনের ব্যবহার করে এর রূপায়ণের নির্দেশ ছিল। মঞ্চের উপকরণের অভাবকে মেনে নিয়ে যিনি এমন চিরন্তন মূল্যের নাটক উপহার দিতে পারেন তিনি অলােকসামান্য প্রতিভা।
আঙ্গিকের দিক থেকে, সংলাপের ঔজ্জ্বলে, চরিত্র চিত্রণের সফলতায়, অনুভূতির গাঢ়তায় এবং এক রহস্যময় মােহাচ্ছন্ন পরিবেশ সৃজনের দক্ষতায় ‘কবর’ তার শ্রেষ্ঠ রচনা।
শুধু তার নয়, বাংলাদেশের নাটকের এবং মঞ্চের দৃষ্টি প্রসার করা প্রথম এবং শ্রেষ্ঠ রচনা কবর।
‘কবর’ নাটকে ভাষা আন্দোলনের শহীদরা কবরে যেতে অস্বীকার করে। সরকারি নির্দেশে তাদের মৃতদেহ ট্রাকে চাপিয়ে গােপনে কবরস্থানে নিয়ে আসা হয়েছে তাড়াতাড়ি মাটি চাপা দেবার জন্য। কিন্তু শহীদরা কবরে যেতে রাজি নয়। ইন্সপেক্টর চাতুরীর আশ্রয় নেয়। শহীদের সমাধিস্থ হবার জন্য প্ররােচনাদানের উদ্দেশ্যে ডেকে আনা হয় তার মা ও স্ত্রীকে। কুশলী হাতে নাট্যকার এখানে হৃদয় মন্থন করা করুণ রসের সৃষ্টি করেন, যা নির্মম।
এর মধ্যে মুর্দা ফকিরের তীব্র, তীক্ষ্ণ ব্যঙ্গ, নেতা ও ইন্সপেক্টরের উদ্দেশ্যে উচ্চারিত ফকিরের ভর্ৎসনা ‘গন্ধ’ তােমাদের গায়ে মরা মানুষের গন্ধ। তােমরা এখানে কী করছাে? যাও তাড়াতাড়ি কবরে যাও।
অভিব্যক্তিবাদী আঙ্গিকে রচিত কবর নাটকে নাট্যকার সচেতনভাবে কিছুটা অ্যাবসার্ড আবহও এনেছেন। উল্লেখ্য বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে কাজ করার অভিযােগ এনে মুনীর চৌধুরীকে ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান সরকার আটক ও জেলে প্রেরণ করে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup