বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস সম্পূর্ণরূপে আধুনিক কালের সৃষ্টি। ১৮০১ থেকে বাংলা গদ্যের যাত্রা শুরু হলেও বাংলা উপন্যাস সৃষ্টিতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। প্যারীচাঁদ মিত্রের আলালের ঘরের দুলাল’ (১৮৫৭) উপন্যাসের আদলে গঠিত হলেও সার্থক উপন্যাসের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পর্যন্ত। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্যে সৃষ্টি হয় সার্থক উপন্যাস। তার একটি উল্লেখযােগ্য সামাজিক উপন্যাস হলাে কৃষ্ণকান্তের উইল' (১৮৭৮)।
এ উপন্যাসের মুখ্য চরিত্র রােহিণী। সে ছিল পরম রূপবতী, বুদ্ধিমতী, লাস্যময়ী, চঞ্চলা ও বিধবা। বিধবা বলেই হিন্দুশাস্ত্র মতে তার ঘরণী হওয়ার পথ সারা জীবনের জন্য বন্ধ। কিন্তু সে ভ্রমরের স্বামী জমিদার পুত্র গােবিন্দলালকে ভালােবাসতাে। গােবিন্দলালকে না পাওয়ার বেদনা ও স্বীয় ব্যর্থ যৌবনের হাহাকারে সে বার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। বিধবা নারী রােহিণীকে অবলম্বন করে বঙ্কিমচন্দ্র নিজেই শিল্পবােধ ও নৈতিক আদর্শের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন।
বিধবা নারী রােহিণীর হত্যার ঘটনাটির শৈল্পিক ও নৈতিক বিচারমান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বঙ্কিমচন্দ্র এ প্রসঙ্গে বঙ্গদর্শনে লিখেছিলেন, অনেক পাঠক আমাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছেন- ‘রােহিণীকে মারিলেন কেন? অনেক সময়ই উত্তর দিতে বাধ্য হইয়াছি, আমার ঘাট হইয়াছে।'
কাব্যগ্রন্থ মনুষ্য জীবনের কঠিন সমস্যা সকলের ব্যাখ্যা মাত্র, এ কথা যিনি না বুঝিয়া, একথা বিস্তৃত হইয়া কেবল গল্পের অনুরােধে উপন্যাস পাঠে নিযুক্ত হয়েন, তিনি এ সকল উপন্যাস না পড়িলেই বাধ্য হই।
বঙ্কিমচন্দ্রের এ ধরনের মনােভাবের প্রেক্ষিতে অনেকে মনে করেন নীতিবাদী বঙ্কিমের কাছে শিল্পী বঙ্কিমের পরাজয় ঘটেছে। এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলাে- রােহিণী, ভ্রমর ও গােবিন্দলাল।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup