বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান প্রথাবিরােধী কথাসাহিত্যিক, জ্যোতির্ময় ও বহুমাত্রিক লেখক ড. হুমায়ূন আজাদ কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ ছাড়া উপন্যাসও লিখেছেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক- সাংস্কৃতিক দুরবস্থা, অব্যবস্থাপনা, অনিয়মতান্ত্রিকতা, দলীয়করণ, দুর্নীতি ও অবিচার নির্ভয়ে তুলে ধরেছেন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’ (১৯৯৪) উপন্যাসের ঘটনা-বিন্যাসে এবং চরিত্র চিত্রণের মাধ্যমে।
প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন বাংলাদেশের ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলব্যাপী সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে সমাজজীবনের যাবতীয় স্বাভাবিকতা ও নিয়মতান্ত্রিকতা। রাষ্ট্রীয় কদাচারের সঙ্গে বিনষ্ট হয়েছে সুশীল সমাজের লােকেরা। সারা দেশই পরিণত হয়েছিল দুঃসহ কারাগারে ।
সামরিক ও রাজনৈতিক সন্ত্রাসে পর্যন্ত বাংলাদেশ প্রত্যক্ষ করেছে উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদ। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিপর্যয় অগণতান্ত্রিকতা, স্বৈরাচার সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ায় জনসমাজের সুস্থ ভিত্তি এবং স্বাভাবিক গতিশীলতা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়ায় নায়ক রাশেদের মনে জমে উঠেছে সমাজ সম্পর্কিত নেতিবাচক ধারণা, দৃষ্টিভঙ্গী ও প্রতিক্রিয়া।
ঔপন্যাসিকের ভাষ্য অনুযায়ী এ অবস্থায় মাঝে মাঝে কাল ঘুমে পায় রাশেদকে,- সে ঘুমিয়ে পড়ে যেন মরে গেছে বা তার জন্মই হয় নি, এই জন্ম না হওয়া রাশেদের ঘুমের বাইরে ঘুম ভাঙা মানুষের জগতের বড়াে ঘটনা যাকে ইতিহাস বলা হয়, তা ঘটে যায়। এমন ঘটনা তার ছেলেবেলায় ঘটেছে, আজকের মতই তখনও সে গুমিয়েছিল)এই জনসমাজের ঘুমের মধ্যেই রাষ্ট্রীয় সামরিক ত্রাস আসে।
সমাজের বিস্তৃত আয়তনে নানা ঘটনাক্রমে রাশেদ লক্ষ্য করে স্বাধীনতা বিরােধীদের ত্রাস ও নৈরাজ্য। জনমত উপেক্ষা করে একনায়কতন্ত্রী শাসন দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যমান থাকায় রাশেদের মনে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা তীব্রতর হয়, সুশাসনের প্রত্যাশা গড়ে ওঠে। বাংলাদেশ যেন রাশেদের মতই ঘুমন্ত । রাশেদের চেতনায় বাংলাদেশের ইতিহাস তরঙ্গায়িত হয়। সে ভিন্ন ভিন্ন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাতের মাধ্যমে সমাজের কুৎসিত রূপ ও পচনশীল অবস্থা শনাক্ত করেছে। রাশেদের এ উপলব্ধি স্থানিক উপন্যাসের সূত্রে পাঠকচেতনাকে প্রভাবিত করে।
শাসকশ্রেণির ক্ষমতার লােভ, ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার জন্য সুবিধাবাদী ও মেরুদণ্ডহীনদের তৎপরতার গল্পগুলাে জাতীয় জীবনের সত্তা নিয়ে রাশেদের মাধ্যমে পরিণত হয় এ উপন্যাসের বয়ানে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup