বামপন্থি রাজনৈতিক নাট্যকার হিসেবে প্রসিদ্ধ উৎপল দত্তের টিনের তলােয়ার’ (১৯৭১) নাটকের মধ্যে দেশপ্রেমের উন্মাদনা লক্ষ করা যায়।
নাটকটির মধ্যে বেঙ্গল অপেরার নতুন নাট্যকার প্রিয়নাথ মল্লিক ওয়াহাবি আন্দোলনের নেতা তিতুমীরকে নিয়ে নাটক লিখেছে, যে তিতুমীর গ্রাম বাংলার কৃষকদের হয়ে লড়াই করেছে ব্রিটিশ সৈন্যের বিরুদ্ধে। শুধু তিতুমীরের দেশপ্রেমকে মর্যাদা দেওয়ার জন্য নয় ১৮৭৬ সালের পরাধীন ভারতবর্ষে সাম্রাজ্যবাদকে তুলে ধরাও এ নাটকের লক্ষ্য ।
১৮৭৬ সালেই সাম্রাজ্যবাদের নিজমুখে মসীলেপনের কুখ্যাত বছর। ওই বছর বাংলা নাট্যশালায় ‘টিনের তলােয়ার’ দেখে ভীতসন্ত্রস্ত ব্রিটিশ সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে নাট্য নিয়ন্ত্রণের নামে নাট্যশালার কণ্ঠরােধ করার ব্যবস্থা করে। এখানে তিতুমীরের মুখে, সধবার একাদশী নাটকের নিমচাদের মুখে শুনতে পাই দেশপ্রেমের বাণী ।
নাটকের মধ্যে প্রায় সবকটি চরিত্রই দেশপ্রেমের জয়গান করেছে। এমনকি দর্শক সারিতে বসে নাটক দেখতে দেখতে ময়নাও বলে উঠেছে বিদেশি দস্যুর তীরে হৃদয়ে রুদ্ধি দ্বার। বেনীমাধব তার প্রত্যুত্তরে বলে, মা আমি তিতুমীর, দেশের মাটি মুঠিতে ধরে এই শপথ নিই। ব্রিটিশবিরােধী এই প্রতিবাদ প্রমাণ করে ‘ টিনের তলােয়ার’ মামুলি বাবু কালচারের প্রতিচ্ছবি নয় । উৎপল দত্ত প্রিয়নাথের লেখনীতে তিতুমীর ও ওয়াহাবি আন্দোলনের যে ঘটনা লিপিবদ্ধ করলেন তা আসলে কৃষকদের রক্তাক্ত সংগ্রাম।
টিনের তলােয়ার নাটকটি আসলে সংগ্রামের প্রতীক। এ নাটকে নাট্যকার নট-নটীদের সামাজিক অর্থনৈতিক দুর্দশা ও তাদের জীবনসংগ্রামের মধ্যেই তুলে ধরেছেন ব্রিটিশবিরােধী সংগ্রাম। ঢাল, টিনের তলােয়ার প্রভৃতির মাধ্যমে বিপ্লবের পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
বেনীমাধব সধবার একাদশীর মঞ্চ থেকে দর্শকাসনে ল্যামবার্ট সাহেবকে দেখে চীকার করলে বলে- “যতক্ষণ এক ফিরিঙ্গি শয়তান দেশের পবিত্র বুকে পা রেখে দাঁড়ানাে থাকবে, ততক্ষণ এই ওয়াহাবি তিতুমীরের তলােয়ার কোষবদ্ধ হবে না কখনাে।” এ সংলাপ থেকে বােঝা যায়, এ নাটক কোন মামুলি নাটক নয়, টিনের তলােয়ার আসলে স্বাধীনতা সংগ্রামের হাতিয়ার, জনগণের চেতনায় শান দেওয়ার অস্ত্র অর্থাৎ সংগ্রামের হাতিয়ার।
বেনীমাধব, বসুন্ধরা, ময়না, প্রিয়নাথ, বীরকৃষ্ণ ও বাচস্পতি এ নাটকের উল্লেখযােগ্য চরিত্র। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিতে শ্রেণিদ্বন্দ্বের রাজনৈতিক বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ এ নাটকটি।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup