বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস সম্পূর্ণরূপে আধুনিক কালের সৃষ্টি। উপন্যাসের বাহন গদ্য। ১৮০১ থেকে বাংলা গদ্যের যাত্রা শুরু হলেও বাংলা উপন্যাস সৃষ্টিতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। প্যারীচাঁদ মিত্রের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ (১৮৫৭) উপন্যাসের আদলে গঠিত হলেও সার্থক উপন্যাসের জন্য আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৮৩৮-১৮৯৪) পর্যন্ত।
দুর্গেশনন্দিনী (১৮৬৫) বঙ্কিমচন্দ্রচট্টোপাধ্যায়ের প্রথম উপন্যাসই কেবল নয়, এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক উপন্যাস। বস্তুতপক্ষে, এই উপন্যাস থেকেই বাংলা সাহিত্যে সার্থক উপন্যাস ধারার সূত্রপাত। বাংলা উপন্যাসের যাত্রা ইতিহাস দিয়ে। দুর্গেশনন্দিনী’ ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস হলেও ইতিহাসের সংস্পর্শ সামান্য।
খ্রিষ্টীয় ষােল শতকের শেষ পর্যায়ে উড়িষ্যার অধিকার নিয়ে মােগল ও পাঠানদের মধ্যে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল তাকেই এ উপন্যাসের পটভূমিকা হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
উপন্যাসে যুদ্ধবিগ্রহের কলকোলাহলের স্থান দেওয়া হলেও এতে প্রেমের সূচনা, বিকাশ ও পরিণতির পরিচয় দান করা হয়েছে। বঙ্কিমচন্দ্র এ উপন্যাসের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের রুদ্ধদ্বার খুলে দিয়ে, উপন্যাসের সীমা, বিস্তার ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা আশ্চর্যভাবে বাড়িয়ে দিলেন।
দুর্গেশনন্দিনী’ আমাদের উপন্যাস সাহিত্যে একটি নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে ঐতিহাসিক বিপ্লব একজন দুর্গস্বামীর ভাগ্যের ওপর কিরূপ অতর্কিত বজ্রপাতের মতাে এসে পড়ে, তারই চিত্র উপন্যাসে বিধৃত। উপন্যাসের ঘটনা আশ্চর্য দ্রুতগতিতে প্রবাহিত। দুর্গ জয়ের বিবরণে, বীরেন্দ্র সিংহের বিচারের দৃশ্যে ও কতলু খাঁর হত্যা বর্ণনায় শিল্পী উচ্চাঙ্গের বর্ণনা ও কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়েছেন।
কারাগারে আয়েশার প্রেমাভিব্যক্তির দৃশ্যটাই উপন্যাসের কেন্দ্রস্থল। সেবার মধ্য দিয়ে অনিবার্য প্রেমের পূর্ণ বিকাশ দেখিয়ে আমাদেরকে চমৎকৃত করেছেন। এ উপন্যাসের চরিত্রগুলাে ইতিহাসের প্রবহমানতায় কোথাও স্থির হতে পারে নি, ফলে লেখক চরিত্র সৃষ্টিতে তেমন পারঙ্গমতা দেখাতে সক্ষম হন নি।
উপন্যাসের উল্লেখযােগ্য চরিত্র হলাে- বীরেন্দ্র সিংহ, ওসমান, তিলােত্তমা, আয়েশা, বিমলা প্রমুখ। দুর্গেশনন্দিনী’ উপন্যাস রচনা করে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে প্রথম সার্থক উপন্যাস রচনার স্বাক্ষর রাখেন।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup