পল্লীকবি উপাধায় ভূষিত জসীমউদ্দীন-এর সাহিত্যকর্মের শ্রেষ্ঠ ফসল, কাহিনি কাব্য নশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯)। এ কাব্যটি বহুল আলােচিত, পঠিত এবং বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হওয়ায় দেশ-বিদেশে নন্দিত হয়েছে।
শিল্পী তার যুগ জীবনের ঘাত-প্রতিঘাত এড়িয়ে সকল জটিলতা পরিহার করে বাংলা কাব্যের শেকড়ের সন্ধানে যে আত্মনিয়ােগ করলেন, তারই উৎকৃষ্ট ফসল নকশী কাঁথার মাঠ'।
পুরাতন পল্লীগীতি ও গাঁথার রাজ্য থেকে উপকরণ সংগ্রহ করে পল্লীর অপেক্ষাকৃত নিস্তরঙ্গ সাদামাটা জীবনের অপূর্ব মাধুর্য থেকেই কাব্য মহিমা দান করে বিস্ময়ের সৃষ্টি করলেন। গেঁয়াে বাতাসের ন্যায়ই তার এ কাব্যের আবেদন। অবহেলিত পল্লীজীবনের ক্ষুদ্র তুচ্ছ প্রাণ ও তার উপকরণকে কবি তার কাব্যের বিষয়বস্তু করেছেন। তার লেখনীর যাদু নকশী কাঁথার মাঠ' এ জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কাব্যটি তার কাব্য খ্যাতিকে দিয়েছিল দৃঢ়তর প্রতিষ্ঠার ভিত্তি।
নকশী কাঁথার মাঠ' কাব্যে কবি পল্লীর পটভূমিতে রচিত দুটি গ্রাম্য ছেলেমেয়ের প্রেমের উন্মেষ, বিকাশ ও বিষাদজনক পরিণতির চিত্র আঁকতে গিয়ে পল্লীর প্রাকৃতিক দৃশ্য, সামাজিক আবেষ্টনী, এর কর্মধারা ও প্রতিদিনকার ঘরকন্নার অতি বাস্তব ও জীবন্ত ছবি এঁকেছেন।
প্রেম ভাবনা, দাম্পত্য বেদনা কবির লক্ষ্য হলেও সমাজ শক্তির নিরন্তর পল্লীজীবনের গােয়ার্তুমি, জটিল ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া মানব জীবনকে কীভাবে বিষাদময় ও বিপন্ন করে তােলে তারই চালচিত্র কবি অঙ্কন করেছেন নিপুণভাবে।
ভাষার স্নিগ্ধতায়, উপমা রূপক উৎপ্রেক্ষার ব্যঞ্জনায়, ছন্দের মাধুর্যে, করুণ রসের মূৰ্ছনায় কাব্যটি হয়ে উঠেছে পল্লীবাংলার বেদনার দলিল। কবি বাঁশির সুর উথিত বেদনাকে হেঁকে তুলেছেন বিশেষ আন্তরিকতায় ও পারঙ্গমতায়। জীবনের গভীর তলদেশ হতে উদগত এ কাব্যের কাহিনি।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup