সজাগ অনুভূতি ও তীক্ষ্ণ রসবােধসম্পন্ন নাট্যকার হিসেবে নূরুল মােমেন বাংলাদেশের সাহিত্যে একটি বিশিষ্ট আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। আঙ্গিকের নতুনত্ব, বিষয়ের স্বাতন্ত্র্য ও সংলাপের রসমাধুর্য তার নাটককে স্বতন্ত্র পরিচয়ে উদ্ভাসিত করেছে।
জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি ছিলেন অনন্য। বাংলাদেশের নাট্য সাহিত্যের ধারাটিকে এগিয়ে নেওয়ার কৃতিত্বের জন্য তিনি নাট্যগুরু আখ্যায় আখ্যায়িত হয়েছেন।
নূরুল মােমেনের শ্রেষ্ঠ নাটক ‘নেমেসিস’ (১৯৪৮)। ১৯৩৯-১৯৪৩ সালের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নূরুল মােমেন নাটকটি রচনা করেন।
নাটকের আঙ্গিকগত পরিকল্পনাটি সম্পূর্ণ নতুন। নাটকের বিশেষত্ব হল, এটি এক ঘণ্টার ব্যাপ্তিতে এক অঙ্কে একক অভিনেতার উক্তিতে সম্পূর্ণ হয়েছে। অনেকটা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বিনি পয়সার ভােজের মতাে। তবে হালকা হাসি নয়, গভীর সমস্যামূলক জীবনাদর্শ ‘নেমেসিসের উপজীব্য।
রচনাশৈলীর নতুনত্ব এবং চরিত্র ও ঘটনার অমােঘ পরিণতির সার্থক রূপায়ণে নাটকটি বিশেষ গুরুত্বের অধিকারী হয়েছে। নাটকটির কাহিনি দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ের চোরাকারবার অবলম্বনে রূপ লাভ করেছে। যে ব্যক্তি চোরাকারবারে যথেষ্ট সমৃদ্ধি লাভ করেছে সে ব্যক্তিই ন্যায় ও অন্যায়ের দ্বন্দ্বে জর্জরিত হয়েছে। অবশেষে সে আত্মঘাতী হয়ে অকল্যাণের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে চেয়েছে। এক্ষেত্রে ভাগ্যের প্রতিশােধ আশ্চর্য বেদনার মাধ্যমে বিবৃত হয়েছে।
যুদ্ধোত্তর মন্বন্তরে চোরাকারবারীর শিকার সুরজিত নন্দীর অনুশােচনার যন্ত্রণা আর দ্বন্দ্ব এবং তা থেকে আত্মমুক্তির বিষয়টি নাট্যকার অত্যন্ত চমক্কারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কাহিনির পরিকল্পনায়, সংলাপের ব্যঞ্জনায়, ঘটনার অনিবার্যতায় এবং উপস্থাপনায় ‘নেমেসিস একটি বিশিষ্ট নাটক হিসেবে বিবেচনার যােগ্য।
নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র স্কুল মাস্টার সুরজিত নন্দী। এছাড়াও অদৃশ্য চরিত্র হিসেবে আছে নৃপেন বােস, তার কন্যা সুলতা, ম্যানেজার অসীম বাবু, ইয়াকুব প্রমুখ। তার সমাজের প্রতি দৃষ্টি ছিল নিতান্তই বাস্তবসম্মত। সেজন্য তিনি ঐতিহাসিক বা দেশাত্মবােধক নাটক রচনায় আগ্রহ দেখান নি। সমকালীন জীবনকে তিনি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করেছেন এবং সে জীবনের স্বরূপ বিশ্লেষণে তিনি তৎপরতা দেখিয়েছেন।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup