সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ সংখ্যাধিক্যে নয়, উৎকর্ষে নাটক রচনায় তার কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। বহিপীর' (১৯৬৫) নাটকের আঙ্গিকের অভিনবত্বে তার বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ পেয়েছে।
পেয়েছে। এ নাটক তাহেরা নাম্নী এক তরুণীকে সৎমা ও বাবা বিয়ে দেয় বুড়াে এক পীরের সঙ্গে। এই পীর বইয়ের ভাষা অর্থাৎ সাধুরীতিতে কথা বলেন বলে তাকে বহি (বই) পীর বলে অভিহিত করা হয়েছে।
পীরের বক্তব্য হলাে, বইয়ের ভাষায় বা সাধুরীতিতে কথা বললে নানা রকমের আঞ্চলিকভাষার বাংলাদেশের তার কথা বুঝতে অনুসারী ও শ্রোতাদের অসুবিধা হবে না। নাটকে তাহেরাকে সে বিয়ে করলেও তাহেরা কবুল’ বলে নি। বরং ছােট এক চাচাতাে ভাইকে নিয়ে পালিয়ে নদীর ঘাটে আসে সে। রেশমপুরের জমিদার হাতেম স্ত্রী খােদেজা ও পুত্র হাশেমকে নিয়ে নদীপথে ঢাকায় আসছিলেন। নদীর ধারে তাহেরাকে দেখে সে তাকে বজরায় তুলে নেয়।
এদিকে বহিপীর তার ভৃত্য হকিকুল্লাকে নিয়ে তাহেরাকে খুঁজতে নৌকাযােগে বের হয়। তাদের নৌকা জমিদার হাতেমের বজরার সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুর্ঘটনা ঘটার আগেই হাতেম বহি-পীর ও তার ভৃত্যকে স্বীয় বজরায় তুলে জীবন বাঁচায়। নাটকীয়তা এখানেই যে, একই বজরার দুই কামরায় বহিপীর ও তাহেরার অবস্থান কিন্তু কেউ তা জানে না এবং তাদের পারস্পরিক পরিচয়ও জমিদার-পরিবারের কাছে অজানা। তবে অল্প সময় পরেই সে পরিচয় জানা হয়ে যায় এবং বহিপীর তাহেরাকে নিজের আস্তানায় নিতে চায়। এ কারণে সে নানা কৌশল প্রয়ােগ করেও ব্যর্থ হয়। অবশেষে হাশেম ও তাহেরা নবজীবনের পথে বের হলে নতুনের জয়গাথা রচিত হয় এই নাটকে।
নাটকটি লেখকের ‘লালসালু’ উপন্যাসের সঙ্গে মিলিয়ে পড়া যেতে পারে। এখানেও ধর্মকে ভণ্ড বহিপীর ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করে। বহিপীর-মজিদ, তাহেরা>জমিলা, হাতেম>খালেক ব্যাপারি, আমেনা>খােদেজা, হাশেম> আক্কাস-এভাবে প্রতিতুলনা করে বহিপীর’ ও ‘লালসালু’ পাঠ করা যেতে পারে।
নাটক ও উপন্যাসটির বক্তব্য-বিষয় মূলত একই। সমাজের সমস্যা তার নাটকে এসেছে, কিন্তু তা পরিবেশিত হয়েছে গতানুগতিকতার বাইরে। বিষয়বন্ধু নির্বাচনে, আঙ্গিক রূপায়ণে ও সংলাপ সংযােজনায় তার বিশিষ্টতা বিদ্যমান।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup