পালা/রূপকথার নাম | রচয়িতা |
---|---|
মহুয়া | দ্বিজ কানাই |
মলুয়া | চন্দ্রাবতী (অনুমান) |
চন্দ্রাবতী ও জয়চন্দ্র | নয়ানচাঁদ ঘােষ |
কমলা | দ্বিজ ঈশান |
দস্যু কেনারাম | চন্দ্রাবতী |
দেওয়ানা মদিনা | মনসুর বয়াতী |
বিদ্যাসুন্দর | কবি কঙ্ক |
রামায়ণ | চন্দ্রাবতী |
রূপবতী, কাজল রেখা, দেওয়ান ভাবনা | অজ্ঞাত |
কঙ্ক ও লীলা | দামােদর, রঘুসুত, নয়ানচাঁদ ঘােষ, শ্রীনাথ বেনিয়া |
মৈমনসিংহ-গীতিকা’ ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রাচীন পালাগানের সংকলন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা থেকে স্থানীয় সংগ্রাহকদের সহায়তায় প্রচলিত এ পালাগানগুলাে সংগ্রহ ও সম্পাদনা করে মৈমনসিংহ গীতিকা (১৯২৩) নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। গ্রন্থটি বিষয়মাহাত্ম্য ও শিল্পগুণে শিক্ষিত মানুষেরও মন জয় করে।
মৈমনসিংহ গীতিকায় ১০টি গীতিকা স্থান পেয়েছে। যথা : মহুয়া, মলুয়া, চন্দ্রাবতী, কমলা, দেওয়ান ভাবনা, দস্যু কেনারামের পালা, রূপবতী, কঙ্ক ও লীলা, কাজলরেখা ও দেওয়ানা মদিনা।
ভনিতা থেকে কিছু গীত রচয়িতার নাম জানা যায়। যেমন মহুয়া- দ্বিজ কানাই, চন্দ্রাবতী-নয়ানচাদ ঘােষ, কমলা-দ্বিজ ঈশান, দস্যু কেনারামের পালা-চন্দ্রাবতী, দেওয়ানা মদিনা- মনসুর বয়াতি।
বয়াতি। কঙ্ক ও লীলার রচয়িতা হিসেবে ৪ জনের নাম পাওয়া যায় (দামােদর দাস, রঘুসুত শ্রীনাথ বিনােদ ও নয়ানচাদ ঘােষ)।
অবশিষ্ট গীতিকার রচয়িতার নাম জানা যায় না। গীতিকায় রচয়িতার নাম থাকলেও তাঁদের স্বতন্ত্র কবিত্বের চিহ্ন নেই; বরং বিষয়বস্তু, শিল্পাঙ্গিক, ভাষাভঙ্গি ও পরিবেশনা রীতি অভিন্ন বলেই প্রতিভাত হয়।
আখ্যানগুলি লােকসমাজ থেকেই গৃহীত হয়েছে। ধর্ম নয়, পার্থিব জীবনকথা গীতিকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। মৈমনসিংহ গীতিকার দস্যু কেনারামের পালা ছাড়া বাকি ৯টি পালার মুখ্য বিষয় নর-নারীর লৌকিক প্রেম। প্রেমের পরিণতি কোনােটির মিলনাত্মক, কোনােটির বিয়ােগান্তক। নায়িকার নামানুসারে গীতিকাগুলির নামকরণ হয়েছে।
গীতিকাগুলিতে পুরুষ চরিত্রের তুলনায় নারী চরিত্রের ভূমিকা উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। প্রেমের প্রতিষ্ঠায় তারাই বেশি সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করেছে। নারীদের একনিষ্ঠ প্রেম ও বলিষ্ঠ চরিত্র থেকে অনেকে মনে করেন, গীতিকাগুলােতে কোনাে মাতৃতান্ত্রিক সমাজের প্রভাব থাকতে পারে।
নারী-চরিত্রের মহিমা কীর্তন করে দীনেশচন্দ্র সেন গ্রন্থের ভূমিকায় বলেন, “এই গীতিকাগুলির নারী চরিত্রসমূহ প্রেমে দুর্জয় শক্তি, আত্মমর্যাদার অলঙ্ পবিত্রতা ও অত্যাচারীর হীন পরাজয় জীবন্তভাবে দেখাইতেছে।
নারীপ্রকৃতি মন্ত্র মুখস্থ করিয়া বড় হয় নাই- চিরকাল প্রেমে বড় হইয়াছে। রচয়িতাদের আবির্ভাব কাল, কাব্যের জীবনকথা, আর্থ-সামাজিক পটভূমি, ভাষাদর্শ ইত্যাদি ব্যাখ্যা করে গীতিকাগুলি মধ্যযুগে রচিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।
কাজলরেখা’ রূপকথাধর্মী, এর বিষয়বস্তু প্রাচীন। এটি ছাড়া অন্য সব গীতিকায় সামন্ত যুগের সমাজচেতনার ও মূল্যবােধের ছায়াপাত রয়েছে। রাজা, জমিদার, দেওয়ান, কাজী, কারকুন, সওদাগর, পীর-দরবেশ, সাধু-সন্ন্যাসী প্রভৃতি চরিত্র মধ্যযুগের মুসলিম শাসন-ব্যবস্থাকেই সূচিত করে।
সামন্তসমাজের মূল্যবােধ ধারণ করেও মানবপ্রেমের মহিমা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র, ইহজাগতিকতা এবং নৈতিকতা মৈমনসিংহ গীতিকাকে এমন সাহিত্যিক মূল্য ও মর্যাদা দান করেছে, যা আধুনিক যুগের উপন্যাসের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup