শওকত আলীর যাত্রা (১৯৭৬) উপন্যাসে ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিলের জিঞ্জিরা সৈয়দপুরের ঘটনা ধারণ করেছে। যাত্রা’র প্রথমেই বুড়িগঙ্গায় হুড়ােহুড়ি পাড়াপাড়ি করে নৌকায় ওঠা’ পলায়নপর জনস্রোতের ঢাকা থেকে জিঞ্জিরা হয়ে উদ্দেশ্যবিহীন ছুটে চলার মর্মান্তিক দৃশ্য বিবৃত হয়েছে। হাজার হাজার ভয়তাড়িত রাতজাগা, ক্লান্ত মানুষগুলাের একই চিন্তা এখন দূরে চলে যাওয়া। শহর থেকে শুধু চলে যাওয়া যেখানে হােক, ঠিকানাবিহীন হােক শুধু হেটে চলা। এক নদী পার হয়ে আরেক নদী। যেন বা বাংলাদেশের বুকের ভিতরে চলে যাচ্ছে মানুষ শত্রুর হাত যেন পৌছতে না পারে, মৃত্যুর হিংস্র থাবার বাইরে যেন চলে যাওয়া যায় ।
সেদিন পলায়নপর মানুষের কোনাে স্বতন্ত্র পরিচিতি ছিল না, সেদিন সবাই একসঙ্গে হাটে, তারপর লীলা-মঞ্জু-সাকিনা, হাসান, বাচ্চারা, বিনু, রায়হান যেন একটি পরিবার। এখানে পঙ্গু, অসুস্থ হাসানের জন্য সেবা করতাে বিনু প্রফেসর পত্নী, এখানে লীলা অপেক্ষা করে হাসানের জন্য যােশেফ ফার্নান্দেজ ধরে রাখে হাসানকে, রায়হান টাকার জন্য ঢাকার দিকে রওনা দেয় রাতের আধারে। পলায়নটা সেদিন সত্য ছিল, অপরিহার্য ছিল। তবু তারও মধ্যে আনিসের মতাে লােকেরা দেখেছে প্রতিরােধের লক্ষণ। ‘এই অবস্থাতেই প্রতিরােধ গড়ে উঠবে কেউ চাক বা না চাক তবু প্রতিরােধ হবে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup