ত্রিশােত্তর আধুনিক বাংলা কবিতার অন্যতম পথিকৃৎ কবি জীবনানন্দ দাশ (১৮৯৯-১৯৫৪)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর পাশ্চাত্য কাব্যরীতি আত্মস্থ করে তিনি কাব্য রচনা করলেও তিনি রূপসী বাংলার কবি হিসেবে পরিচিত। জীবনানন্দ দাশের অন্যতম কাব্যগ্রন্থ 'বনলতা সেন' (১৯৪২)।
জীবনানন্দ দাশ আধুনিক কবি হলেও গ্রামবাংলার উপাদান-উপকরণ তার কাব্যে পেয়েছে স্বচ্ছন্দ প্রবেশাধিকার। গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় প্রকৃতি তার রূপসী বাংলা কাব্যে রূপময় হয়ে উঠেছে। নিসর্গ চেতনায় ইতিহাস বােধের অনুপ্রবেশ ও সঞ্চার কবির কাব্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য এবং এরই সূত্রপাত রূপসী বাংলার সনেটগুচ্ছ।
প্রকৃতি ও দেশপ্রেমিক কবি বাংলার প্রকৃতিকে অনুভব করেছেন রক্তের কোষে কোষে। প্রকৃতিকে আত্মস্থ করেছেন আপন চৈতন্যে। চিরকালীন মমতার সাথে সেঁদামাটি, ঘাসফুল, নদী প্রভৃতির কাছে বার বার তার প্রত্যাবর্তন ঘটেছে। নীলাকাশ, কাশবন, হিজল-নারকেলের সবুজ পাতা তাকে হাতছানি দিয়ে ডাক দিত। প্রকৃতিপ্রেম এক সময় কবিকে নস্টালজিয়ার পথে টেনে নিয়েছে, তাই লক্ষ্মীপেঁচা, শালিক বা কাকের নীড়ে ফেরা তাকে প্রত্যাশী করে তুলেছে।
স্বর্গের চেয়ে শ্যামল সবুজ অপরূপ রূপের আধার রূপসী বাংলাই কবির কাছে শ্রেষ্ঠ আকর্ষণীয়। কবি তাই মৃত্যুর পরেও শঙ্খচিল, রাজহংস বা শালিক পাখি হয়ে রূপসী বাংলায় ফিরে আসতে চান। তাই কবি বলেন-
তােমার যেখানে সাধ’, বাংলার মুখ আমি’, ‘আবার আসিব ফিরে’, ‘এখানে আকাশ নীল, সন্ধ্যা হয় চারদিকে’ ও ‘এইসব ভালাে লাগে’- এ কাব্যের উল্লেখযােগ্য কবিতা।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup