শহীদুল্লা কায়সারের দ্বিতীয় ও শেষ সমাপ্ত উপন্যাস 'সংশপ্তক' (১৯৬৫) বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক রাজনৈতিক বাস্তবতার এক প্রামাণ্য দলিল। সংশপ্তক শব্দটি মহাভারতের। সংশপ্তক শব্দের অর্থ যে সৈনিকেরা জীবনমরণ পণ করে যুদ্ধে লড়ে। পালিয়ে আসে না।
শহীদুল্লা কায়সার এ ধরনের চেতনাকে ধারণ করেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যবহিত পূর্ববর্তী কাল থেকে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের পূর্বকাল অবধি বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তন ও রূপান্তর ‘সংশপ্তকে ধারণ করেছেন।
উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র ভূমিহীন হুমতির গ্রাম্য বিচারের মাধ্যমে শুরু হয়েছে এ উপন্যাস। এই বিচারের মাধ্যমে সমকালীন ভূমিব্যবস্থার আবহ ফুটে উঠেছে। হিন্দু-মুসলিম সম্মিলিত জীবনযাপন, অসাম্প্রদায়িক জীবনবােধ এ উপন্যাসের অন্যতম বর্ণিত বিষয়।
এখানে ঢাকা ও কলকাতার নাগরিক পরিবেশের সঙ্গে বাকুলিয়া ও তালতলি গ্রামের গ্রামীণ পরিবেশের প্রতীকে সমগ্র বাংলাদেশের জীবনযাপন তুলে ধরা হয়েছে। এই সমাজ-মানসের বাস্তবতা ধরা পড়েছে ঔপন্যাসিক দৃষ্টিতে।
বিশ্বযুদ্ধ, দাঙ্গা, দুর্ভিক্ষ, সাম্প্রদায়িকতা ইত্যাদি প্রাসঙ্গিকভাবেই উপন্যাসে উঠে এসেছে।
উল্লেখযােগ্য চরিত্র : রাবেয়া খাতুন (রাবু), জাহেদ, সেকেন্দার, মালু, হুমতি, লেকু, রমজান, রামদয়াল প্রমুখ।
এ উপন্যাসে বাংলার জনগণ সংশপ্তকের মতাে সর্বদা সংস্কৃতি, সম্প্রীতি ও মনুষ্যত্ব রক্ষায় সংগ্রামশীল। ভূমিহীনদের যেমন ভূমি না থাকার কষ্ট তেমনই সামান্য ভূমি যাদের রয়েছে তাদের কষ্ট খাজনার দায়ে ভূমি ধরে রাখতে না পারার। এ উপন্যাসে অসংখ্য চরিত্র ও ঘটনার বিস্তৃতি রয়েছে। রাজনৈতিক কারণে জাহেদের গ্রেপ্তার আবার ফিরে আসার প্রত্যয়ের মধ্যদিয়ে উপন্যাসের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup