সংবেদনশীল কবি, নাট্যকার, সিকান্দার আবু জাফর ঐতিহাসিক পটভূমিকে ব্যবহার করে সিরাজ-উ দ্দৌলা নাটক রচনা করেন।
১৯৫১ সালের ডিসেম্বর মাসে নাটকটি রচিত এবং ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে ইসমাইল মােহাম্মদের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয়।
১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসে আবার অভিনীত হওয়া ছাড়াও এ নাটক বাংলা একাডেমি এবং পাকিস্তান সরকারের জাতীয় পুনর্গঠন সংস্থার অর্থানুকূল্যে ১৯৬৩ সালে ঢাকাতে অভিনীত হয়।
নাটকটি বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রথম প্রকাশিত হয় ডিসেম্বর ১৯৬৫ (পৌষ ১৩৭২) সালে। এটি বিষয়গুণে ঐতিহাসিক এবং রসবিচারে ট্র্যাজেডিধর্মী নাটক।
এই নাটকে উল্লেখযােগ্য চরিত্র ঊনত্রিশটি। এছাড়াও রয়েছে দশের অধিক অপ্রধান চরিত্র। স্বল্পসময়ের জন্য মঞ্চে উপস্থিত চরিত্র নিয়ে মােট চরিত্র সংখ্যা প্রায় চল্লিশটি। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলাে নায়ক সিরাজ। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের মধ্যে রয়েছে মীরজাফর, আলিবর্দি, ক্লাইভ, জন জেফায়ানা হলওয়েল, লুফুন্নিসা, ঘসেটি বেগম, আমিনা বেগম, উমিচাদ, ওয়াটসন, জগৎশেঠ মহতাবাদ, গভর্নর রােজার ড্রেক, মানিকচঁাদ, মােহনলাল, মােহাম্মদি বেগ, মিরন, রাইসুল জুহালা (নারায়ণ সিং/নারায়ণ দাস), রাজবল্লভ, রায়দুর্লভ প্রমুখ।
সিরাজ-উ-দ্দৌলা' নাটকে পলাশীর প্রান্তরে প্রহসনের যুদ্ধ শেষে পাটনায় লােকসংগ্রহ করতে গিয়ে গুপ্তচরের হাতে ধরা পরে কারাবন্দি হন সিরাজ এবং তাঁরই মাতাপিতার কাছে পালিত একজন আত্মীয়সম ঘাতক মিরনের হাতে নিহত হন।
এই নাটকে নাট্যকার তেইশ বছর বয়সী সিরাজের প্রতি যথেষ্ট আন্তরিকতা প্রদর্শন করে সিরাজচরিত্রের দুর্বলতাসমূহ উল্লেখ করেন নি। একই বিষয় নিয়ে রচিত নাটকে সিরাজের চরিত্রে অন্য লেখকগণ কামুকতা, লাম্পট্য, পরস্ত্রীলােভ, অসহিষ্ণুতা, ভীরুতা, কাপুরুষতা, মদ্য ও নেশায় আসক্তি, অকর্মণ্যতা, নিষ্ঠুরতা দেখিয়েছেন।
কিন্তু সিকান্দার আবু জাফরের সিরাজ দেমপ্রেমিক, সাহসী, ধৈর্যশীল, বীরযােদ্ধা, প্রজ্ঞাবান, কর্তব্যপরায়ণ, বলিষ্ঠচিত্ত, তেজস্বী, দয়ালু, প্রজাপালক, নিঃস্বার্থ, পরার্থপর, উদার, সরল, মহৎপ্রাণ, দৃঢ়চরিত্র, নারী আসক্তিহীন ও কর্তব্যপরায়ণ দেশনেতা।
সিকান্দার আবু জাফর ঐতিহাসিক সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এ নাটকটি রচনা করেছিলেন এবং সিরাজউদ্দৌলাকে একজন দেশপ্রেমিক ও দেশের জন্য আত্মােত্সর্গকারী বীর হিসেবে দেখিয়েছেন।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup