কালীপ্রসন্ন সিংহ (১৮৪০-১৮৭০) রচিত একটি উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ ‘হুতােম প্যাচার নকশা’ (১৮৬২)। এই গ্রন্থের বিষয়বস্তুতে কোনাে ধারাবাহিক কাহিনি নেই; সে আমলের কলকাতার কতকগুলাে চিত্র ব্যঙ্গরস সহযােগে এতে পরিবেশিত হয়েছে।
আলালের ঘরের দুলালের চার বছর পরে প্রকাশিত এ গ্রন্থ বাচনভঙ্গি, রচনারীতি, আঙ্গিক প্রভৃতি দিক থেকে লেখক নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন। নকশা উপন্যাস নয়, তা সামাজিক সমস্যামূলক ব্যক্তিগত রচনা। তারপরও হুতােম প্যাচার নকশা’ উপন্যাসের মতােই আশ্চর্যরকম সুখপাঠ্য। এর কারণ কালীপ্রসন্ন সংস্কৃতবহুল পণ্ডিতী ভাষার বদলে কথ্যভাষায় এই নকশা রচনা করেছেন।
আলালী ভাষায় সাধু ও কথ্য উভয় বাক্যরীতির মিশ্র প্রয়ােগ আছে। কালীপ্রসন্ন এই ভাষাকে আরাে স্নিগ্ধতা ও সৌন্দর্য দান করেন। এ কাজটি সম্ভব হয় বাক্যের ক্রিয়াপদে সাধু ও কথ্যরীতি মিশ্রণমুক্ত করার কারণে।
হুতােম প্যাচা’ ছদ্মনামে কালীপ্রসন্ন সিংহ সে আমলের কলকাতাকে যথেচ্ছ ব্যঙ্গের চাবুক মেরেছেন। দেখেছিলেন, তৎকালীন কলকাতার বদ সহবত শােধরাতে গেলে এ ধরনের ঝাঝালাে ভাষা চাই, তাই তিনি হুতােম প্যাচার নকশা’য় অবিকল শহুরে চলিত কথা ব্যবহার করেছেন। তিনিই প্রথম কলকাতা ও এর পাশ্ববর্তী এলাকার কথ্যভাষা সার্থকভাবে গ্রন্থে প্রয়ােগ করেন।
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup