মূলভাব : উত্তম ব্যক্তির মাঝে তাঁর চরিত্র মাধুর্য যেমন থাকে তেমনই থাকে তার মনের প্রশস্ততা। তাই সে কলঙ্ক, দুর্নাম ও অপবাদের ভয় করে না। কিন্তু মধ্যম শ্রেণির লোক অধমের সাথে ব্যবধান রেখে চলে পিছে মানুষ তাকে অধম জ্ঞান করে।
ভাব সম্প্রসারণ : চরিত্র, প্রবৃত্তি এবং প্রবণতা অনুযায়ী মানুষকে উত্তম, মধ্যম এবং অধম-এ তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যারা উত্তম চরিত্রের অধিকারী তারা সৎ, সাহসী এবং আদর্শবান। তারা বরাবরই দৃঢ় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তাই তারা নিশ্চিন্তে অধম, পতিত এবং অসৎ ব্যক্তিদের সাথে মিশতে পারেন। এতে করে তিনি ছোট হয়ে যান না বা চরিত্র কলুষিত হবে এমন কোনো ভয়ও তার থাকে না। কারণ তিনি মিথ্যা অপবাদের ভয় করেন না। সে আলোকের কাছে যদি অন্ধকার থাকে তাহলে আলোকের কোনো ক্ষতি হয় না। বরং অন্ধকারই দূরীভ‚ত হয়। চরিত্রবান উত্তম ব্যক্তিদের আমরা পরশপাথরের সাথে তুলনা করতে পারি। পরশপাথরের সান্নিধ্যে এসে সাধারণ পাথরও সোনা হয়ে যায়। তেমনি চরিত্রহীন অধম ব্যক্তি যদি উত্তম ব্যক্তির সংস্পর্শে আসে তাহলে তার জীবনের রূপরেখা পাল্টে যেতে পারে। সকল ধরনের অন্যায় ও অসত্য পরিহার করে সেও শুদ্ধ জীবনযাপন শুরু করতে পারে। কিন্তু সমাজে যারা মধ্যম শ্রেণির মানুষ, তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ততটা উন্নত নয়। ফলে অসৎ মানুষের সঙ্গে যখন তারা মিশতে যায় তখন সব সময় তারা কলঙ্কের ভয়ে ভীত থাকে। তাই তারা অধম ব্যক্তির সংশ্রব সযতেœ এড়িয়ে চলে। এর ফলে তাদের পক্ষে কোনো মহৎ কাজ করা সম্ভব হয় না। আমাদের এই সমাজে ভালো এবং মন্দ উভয় প্রকার মানুষের বাস। মধ্যম ব্যক্তিরা শুধু ভালো মানুষের সাথে চলতে চায়। মন্দকে ভালো করার কঠিন চেষ্টায় তাঁরা কখনো আত্মনিয়োগ করেন না। তাঁরা কলঙ্ক থেকে শত হাত দূরে থাকতে চান এবং মন্দ লোক সম্পর্কে এক ধরনের ছুঁতমার্গে ভোগেন। ফলে তার থেকে সমাজ কিছুই পায় না। কিন্তু উন্নত চরিত্রের অধিকারী যাঁরা তাঁরা কখনো স্বার্থপরের মতো জীবনযাপন করেন না। কল্যাণের জন্য তাঁরা নিজেদের উৎসর্গ করেন। মিথ্যাকে, জরাকে, অসত্যকে যারা আঁকড়ে পড়ে আছে, তাঁদেরকেই তাঁরা শোনান সত্যের বাণী। জগতের সব মহামানবের অধমের মাঝেই জন্ম নিয়েছেন। তাঁদের সংস্পর্শে অধম পরিণত হয়েছে উত্তমে।
মন্তব্য : আত্মকেন্দ্রিক এবং আপসকামী শ্রেণির মানুষ সমাজে মধ্যম হিসেবে বিবেচিত। গা বাঁচিয়ে চলতেই তাঁরা ভালোবাসেন। কিন্তু উত্তম ব্যক্তিরা সত্যসন্ধানী। তাঁরাই অধমকে আলোর পথ দেখান। তাই অধমের সাথেই মিলেমিশে চলতে তাঁরা কুণ্ঠাবোধ করেন না।