মূলভাব : প্রত্যেক মানুষের জীবনে রয়েছে সুখ-দুঃখের সহাবস্থান। একটিকে ছাড়া অন্যটি মানুষ সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখের সংস্পর্শে না এলে মানুষের স্বীয় সত্তা ও অন্তরশক্তি সঠিকভাবে জাগ্রত হয় না। দুঃখের পরশেই মানুষের বিবেক জাগ্রত হয়, মানুষের জীবন হয় মানবিক বোধে আলোকিত, মানুষ হয়ে ওঠে মহানুভব ও মহীয়ান।
ভাব সম্প্রসারণ : স্রষ্টার বিচিত্র রূপ। তিনি কখনও করুণা ধারায় তাঁর সব সুধা ঢেলে দেন, কখনও তিনি দুঃখের রুদ্রমূর্তি ধারণ করে আমাদের পরীক্ষায় ফেলেন। সুখবিলাসী মানুষ জীবনের সারবত্তা পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারে না। দুঃখে পতিত হলে মানুষ সুখের যথার্থ মর্ম বুঝতে পারে। দুঃখের দারুণ দহন শেষে মানুষের জীবনে যে সুখ আসে, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখই পারে মানুষের অন্তর্নিহিত মনুষ্যত্ব ও বিবেককে জাগ্রত করতে এবং মানুষকে খাঁটি মানুষে পরিণত করতে। দুঃখ মোকাবিলা করার শক্তি দিয়েই মানুষ আপন শক্তির পরিচয় দিতে পারে। পৃথিবীতে মহৎ কিছু অর্জন করতে হলে দুঃখ সইতে হয়। কষ্ট ছাড়া কেষ্ট পাওয়া যায় না বলেই পৃথিবীতে মহামনীষীরা দুঃখকে তুলনা করেছেন পরশপাথরের সঙ্গে। পরশপাথরের ছোঁয়ায় লোহা যেমন স্বর্ণপিণ্ডে পরিণত হয়, দুঃখও তেমনি মানুষের জীবনকে নতুন রূপ দেয়; দুঃখ, কষ্ট ও ত্যাগ-তিতিক্ষা ছাড়া জীবনের স্বর্ণশিখরে আরোহণ সম্ভব নয়। পৃথিবীর বহু মনীষী দুঃখকে অন্তর দিয়ে অনুভব করেছিলেন। দুঃখকে বরণ করে নিয়েছিলেন বলেই আজও তারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.), যিশুখ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মহান ধর্মবেত্তা দুঃখকে জয় করে খাঁটি মানুষে পরিণত হয়েছিলেন; কাজ করেছিলেন মানবজাতির কল্যাণে।
মন্তব্য : বস্তুত, মানুষের মনুষ্যত্ব ও অন্তর্নিহিত গুণাবলির জাগরণের জন্য দুঃখ মানুষের জীবনে পরশপাথরের মতোই কাজ করে।