মূলভাব : সত্য মানবজীবন অমৃতের মতো, কিন্তুু এটি সহজলভ্য নয়। ভুল-ভ্রান্তিকে বাদ দিয়ে নিছক সত্যানুসন্ধান করলে দুর্লভ সত্যকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। কেননা, সত্য অবিমিশ্র নয়; মিথ্যার পাশেই তার অবস্থান।
ভাব সম্প্রসারণ : সত্যের অনুসন্ধান এবং তা লাভ করা মানবজীবনের পরম এবং একমাত্র লক্ষ্য হলেও তা অর্জন করা কঠিন। কারণ মানবজীবন মাটির কলসে তোলা কোনো পবিত্র পানি নয়, তা নদীর প্রবহমান জলধারা এবং সেখানে থাকে অনেক আবিলতা। এর মধ্যে থেকে মানুষকে পানের যোগ্য পানিটুকু ছেঁকে নিতে হয়। সত্যও নদীর জলধারার মতো। তার সঙ্গে মিশে থাকে অনেক মিথ্যা এবং ছলনা। সত্য ও মিথ্যা পাশাপাশি অবস্থান করে। এ দুটি এমন অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত যে একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। আলোর সঙ্গে অন্ধকার যেমন জড়িত, তেমনি সত্যও মিথ্যা দ্বারা আবৃত। জীবনের কণ্টকিত পথে চলতে চলতে মানুষ সকল ভুল-ভ্রান্তি ও মিথ্যাকে অতিক্রম করে একসময় সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ায়; জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা দ্বারা অর্জন করে পরম সত্যকে। যারা ভুল-ভ্রান্তিগুলোকে অতিক্রম না করে শুধু সত্য লাভ করতে চায়, তারা দুর্লভ সত্যের সন্ধান কখনো পায় না। সত্যকে আবিষ্কারের জন্য রূঢ় বাস্তবের দৃপ্ত পদচারণ প্রয়োজন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিষধর সাপের মস্তক থেকে যেমন উদ্ধার করতে হয় মূল্যবান মানিক, তেমনি ভুল-ভ্রান্তি এবং পঙ্কিলতা থেকে উদ্ঘাটন করতে হয় সত্যকে। শিশু যেমন আছাড় খেতে খেতে হাঁটতে শেখে, মানুষও তেমনি ভুল-ভ্রান্তির মধ্য দিয়ে সত্যকে চিনে নেয়। মিথ্যা ছাড়া সত্যের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। অন্তত মানবজীবনে এটি সত্য। মানুষের ভুল হবেই। তবে সে ভুল থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রয়োজন। দিনকে যেমন রাতের সঙ্গে তুলনা করেই চেনা যায়, তাপকে যেমন শৈত্যের সঙ্গে তুলনা করে অনুভব করা যায় সত্যকেও তেমনি মিথ্যার পাশাপাশি রেখেই নির্ণয় করতে হয়। এজন্য প্রয়োজন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা। উদারনৈতিক মনোভাব ও অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টির মাধ্যমে মানুষ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে; কেবল মিথ্যা, পঙ্কিলতা থেকে নিজেকে দূরে রাখার মধ্য দিয়ে নয়। মন্দের ভয়ে যদি কেউ মনের দ্বারই বন্ধ করে রাখে তাহলে তিনি প্রার্থিত বস্তুটি লাভ করতে পারেন না।
মন্তব্য : সত্য কিংবা মিথ্যাকে নিরবচ্ছিন্নভাবে উদ্ঘাটন করা সম্ভব নয়। একটি আরেকটির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে আছে যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।