মূলভাব : জগতে যারা স্মরণীয় ও বরণীয় তাঁরা নিজেরাই নিজেদের পথ রচনা করেছেন। আলোকবর্তিকা হাতে নিয়ে অন্ধকারকে বিদূরিত করে এগিয়ে গেছে চিরকল্যাণ ও মুক্তির পথে। সত্যসন্ধানী মানুষেরা কখনো থেমে থাকে না। পথহীন পথে হেঁটে হেঁটেই তাঁরা আবিষ্কার করে নেয় আলোকিত নতুন পথ।
ভাব সম্প্রসারণ : পার্থিব কামনা-বাসনায় পরিপূর্ণ আমাদের এ মানবজীবন। প্রাপ্তির প্রত্যাশায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এখানে চলছে কর্মোদ্যোগ। সাধনা এবং কর্মকুশলতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ তাই এগিয়ে যায় সামনের দিকে। জীবনের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য সে নিজেই খুঁজে নেয় নিজের পথ। জীবনের আঁকাবাঁকা পথে হাঁটতে হাঁটতে সে একসময় যখন পথের প্রান্তে এসে দাঁড়ায়, যখন সে দেখে তার সামনে আর কোনো পথ নেই, কেবল ঘুটঘুটে অন্ধকার; তখনো সে থেমে থাকে না। আলোর মশাল জ্বালিয়ে সৃষ্টি করে নতুন পথ। সমাজের কল্যাণের জন্য মানুষের মুক্তির জন্য যেসব মহাপুরুষ এ পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁরা সেই তীর্থ পথের পথিক। হযরত মুহাম্মদ (স.), ঈসা (আ.), সক্রেটিস, অ্যারিস্টটল, কনফুসিয়াস এমনি বহু মহামানবের নাম এ প্রসঙ্গে বলা যায়। যাঁরা আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে পথহারা মানুষের জন্য তৈরি করে গেছেন নতুন পথ। তাঁদের আদর্শ, তিমিরবিনাশী অমর বাণী বিভ্রান্ত মানুষকে দেখিয়েছে সত্য ও সুন্দরের পথ। তাঁরা যে জীবনাদর্শ আমাদের সামনে রেখে গেছেন, তা আমাদের পরম পাথেয়। তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমরাও যদি আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হই তাহলে তাদের সম্মুখ থেকে সকল অন্ধকার কেটে যাবে। সমস্ত জঞ্জাল, সমস্ত অন্ধকার ভেদ করে উদিত হবে জীবনের সোনালি সূর্য।
মন্তব্য : আলোকপিয়াসী মানুষ কখনো গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেয় না। ভ্রান্তপথ কখনো তাকে মোহগ্রস্ত করতে পারে না। সে তারা জ্ঞান ও প্রজ্ঞা দিয়ে সত্য ও কল্যাণের পথ প্রাপ্ত হয়। অন্যদেরও সেই কল্যাণের পথে আহবান জানায়। কারণ, যে সচেতন সে বিশ্বাস করে পথিকই পথের স্রষ্টা।