মূলভাব :পৃথিবীতে মানুষ স্মরণীয় ও বরণীয় হয় তার মহৎ কর্মের মধ্য দিয়ে। মানুষের কল্যাণ সাধনায় যারা জীবন উৎসর্গ করেন তারা মানুষের সর্বাধিক প্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা হয়ে ওঠেন আত্মার আত্মীয়। তাই তাদের কেউ ভুলতে পারে না। তারা পৃথিবীতে অমর হন।
ভাব সম্প্রসারণ : আমাদের সমাজে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেয় তার স্বীয় কীর্তিময় অবদান। কিন্তু অর্থবিত্ত দ্বারা সেই স্থান অর্জন সম্ভব নয়। তারাই মহাপুরুষ যাদের জীবন পবিত্র ও মহৎ কর্মে চির প্রাণবন্ত ও উচ্ছল। কোনো কোনো মানুষ শতাধিক বছর জীবিত থেকেও তাদের মতো ইতিহাসে পাতায় নাম লেখাতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, কর্ম মানুষকে মহৎ করে তোলে। এসব মহাপুরুষের জীবন ও সাধনাই স্মরণ মননের যোগ্য। কারণ তা বৃহত্তর মানবসমাজকে মুক্তি, মৈত্রী ও শান্তির পথ দেখাতে সাহায্য করে। অন্য দিকে, এসব প্রতিভাবানরা তাঁদের কর্মের মহিমায় বিশ্বজগৎকে সুশোভিত করেন। সুমহান কর্মের মাধ্যমে আনন্দ, সুখ ও সমৃদ্ধির বহু অজানা দিগন্ত উন্মোচিত করেন, দেখান মুক্তির পথ। মানুষমাত্রই মরণশীল। ক্ষণভঙ্গুর এ জীবনে সত্যের সন্ধানে হযরত মুহম্মদ (সা.), ঈসা (আ.), মুসা (আ.), চৈতন্যদেব প্রমুখ জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তারা কোনো নির্দিষ্ট স্থান ও কালের মানুষ ছিলেন না, ছিলেন সর্বযুগের ও সর্বকালের। তারা জগতে মহাপুরুষরূপে অগণিত মানুষের প্রীতি ও ভালোবাসা লাভ করেছেন। তাদের জন্যই যুদ্ধ-বিগ্রহসঙ্কুল এ পৃথিবী বসবাসের উপযোগী হয়েছে। তাঁদের মানবকল্যাণ কর্ম ও চিন্তা দ্বারা বিপথগামীরাও সুপথে পরিচালিত হয়। আর সভ্যতার ইতিহাসে তাঁরাই সৌভাগ্যবান পুরুষ হিসেবে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকেন। এসব বীর্যবান পুরুষ শারীরিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেও ইতিহাসের পাতায় অবিনশ্বর ও চির অম্লান হয়ে আছেন। পরবর্তী বংশধরেরা সেই সব মহাপুরুষের নাম স্মরণ করে, মহৎ জীবনের স্বর্ণতোরণে উপস্থিত হয়।
মন্তব্য : কাজেই জীবনে মহৎ কিছু করতে হলে, যারা স্মরণীয় তাদের পথ অনুসরণ করে চলা উচিত। সকলের জন্য মনের মধ্যে মমত্ববোধ এবং প্রেমভাব জাগিয়ে তোলাই জীবনকে ধন্য করার উপায়।