রক্তকরবী' (১৯২৫) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপক/সাংকেতিক নাটকের অন্যতম। এ নাটকের চরিত্ররা সমাজের বিভিন্ন অবস্থার ভিন্ন ভিন্ন শ্রেণির সমাজমানসের বিভিন্ন স্তরের প্রতীক।
নাটকটি রূপক/সাংকেতিক বলে কাহিনি এখানে মুখ্য নয়। তবুও নাটকের কাহিনি গড়ে উঠেছে খনি শ্রমিকদের
নিয়ে। যাদের সুনির্দিষ্ট নাম নেই, তারা বিশেষ বিশেষ নম্বর দ্বারা পরিচিত। যেমন- ৬৯, ৭২খ
ইত্যাদি।
নাটকে দার্শনিক চরিত্রটির মুখ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ তার রূপকের সমস্ত আয়ােজন সম্পন্ন করেছেন।
তার সংলাপ রূপকের ঘেরা টোপে আবৃত হলেও তা স্পষ্টই সমাজ শােষণের সূত্রকে ধরিয়ে দেয়।
নাটকের নায়িকা নন্দিনী। সে মুক্ত বিহঙ্গের প্রতীক। তার প্রত্যাশা এবং প্রতীক্ষা কিশােরের জন্য। সে
কিশােরের ডাক শুনতে পায়, কিন্তু বাস্তবতা কিশােরকে সে দেখতে পায় না। আসলে কিশাের বলে
কোন চরিত্র নাটকে নেই, কিশাের হচ্ছে এক টুকরাে আলাে-যার নাম স্বাধীনতা, যার নাম মুক্তি- এই
মুক্তিকেই নন্দিনী মালা পরাবে বলে তার প্রতীক্ষা। তাই নন্দিনী বলেছে- “তুই অমন করে ডাকিস কেন
কিশাের। তাের ডাক শুনে যে ঘরে রইতে নারি।” সমাজ নিষ্পেষণের জগদ্দল পাথর সরিয়ে মুক্তির
প্রতীক্ষাই রক্তকরবী’ নাটকের মৌল উপজীব্য।
এ নাটকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে শ্রেণি চরিত্র, মানবজীবনের বন্ধন ও মুক্তির সংঘাত রাজা ও নন্দিনীর
বিপরীতমুখী চরিত্রে অঙ্কিত হয়েছে।
রাজা বিশাল ক্ষমতার অধিকারী, সে ভয়ঙ্কর। রাজা তার নিজের
ভয়ঙ্কর লােভ লালসা, ক্ষমতা ও অর্থবিত্তের জালে জড়িয়ে নিজের কাছেই নিজে ভয়ঙ্কর মূর্তি ধারণ করে
আছে। কিন্তু এতবড় রাজা হয়েও সে নন্দিনীর চেয়েও দরিদ্র এবং নন্দিনীকে ভয় পায়। নন্দিনী যেমন
মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়ায়, রাজাও তেমনি মুক্তি চায়। কিন্তু স্বার্থ, লােভ ও অর্থের জালে রাজা
এমনভাবে জড়ানাে যা থেকে রাজা বেরিয়ে মুক্ত বাতাসে পাখা মেলতে অক্ষম।
রবীন্দ্রনাথ এ নাটকে চরিত্র সৃষ্টির সর্বৈব সাংকেতিক সার্থকতায় ভাস্বর। নাটকের শিল্পসৌন্দর্য, কথার
অপূর্ব ভঙ্গিমা, ভাষার সরল সৌন্দর্য রক্তকরবী'কে যুগােত্তীর্ণ করবে। তাছাড়া নাটকে জীবনের পূর্ণ পরিণতির যে ইঙ্গিত তা অনবদ্য। হৃদয়ের অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য রূপায়ণ, সূক্ষ্ম কলাকৌশল ও গভীর অন্তদৃষ্টিতে রক্তকরবী’ অনির্বচনীয়।
রক্তকরবী: মডেল প্রশ্ন
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup