মীর মশাররফ হােসেনের ‘গাে-জীবন’(১৮৮৯) একটি প্রবন্ধ পুস্তিকা। প্রবন্ধটির
মূল বক্তব্য হলাে, কৃষিনির্ভর অর্থনীতিতে যে কোনাে কারণেই হােক গাে-হত্যা অনুচিত।
স্বীয় বক্তব্যের সমর্থনে লেখক ধর্মগ্রন্থ এবং প্রাত্যহিক-বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে নানা যুক্তি ও তথ্য পরিবেশন করেছেন।
হিন্দু ও মুসলমান এই দুই ধর্মাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ করার মানসেই মশাররফ হােসেন এ প্রবন্ধ রচনা করেন।
প্রবন্ধটি তৎকালে মুসলিম ধর্মীয় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের মধ্যে যথেষ্ট প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয়। এ কারণে ‘আখবারে এসলামিয়া' (১৮৮৪) পত্রিকা
প্রতিবাদ প্রকাশ করে এবং লেখককে পরে মামলাতে জড়িয়ে পড়তে হয়। অবশেষে মৌলবাদী মুসলিমদের প্রবল চাপের মুখে তিনি ‘গাে-জীবন’ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হন।
"খাদ্য সম্বন্ধে বিধি আছে যে খাওয়া যাইতে পারে-খাইতেই হইবে, গো-মাংস না খাইলে মোসলমান থাকিবে না, মহাপাপী হইয়া নরকযন্ত্রণা ভোগ করিতে হইছে….একথা কোথাও লিখা নাই।"
"এই বঙ্গরাজ্যে হিন্দু-মোসলমান উভয় জাতিই প্রধান। পরস্পর এমন ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যে, ধর্ম ভিন্ন, কিন্তু মর্মে ও কর্মে এক-সংসার কার্যে, ভাই না বলিয়া আর থাকিতে পারি না।
আপদে, বিপদে, সুখে দুঃখে, সম্পদে পরস্পরের সাহায্য ভিন্ন উদ্ধার নাই।
সুখ নাই, শেষ নাই, রক্ষার উপায় নাই।..এমন ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ যাহাদের সঙ্গে, এমন চিরসঙ্গী যাহারা, তাহাদের মনে ব্যথা দিয়া লাভ কী?"
"আরবে কেহই গরু কোরবানি করে না। ধর্মের গতি বড় চমৎকার। পাহাড় পর্বত, মরুভূমি সমুদ্র, নদ-নদী ছাড়াইয়া মোসলমান ধর্ম ভারতে আসিয়াছে, সঙ্গে সঙ্গে কোরবানি আসিয়াছে।
এদেশে দোম্বা নাই-দোম্বার পরিবর্তে ছাগ, উঠের পরিবর্তে গো, এই হইল শাস্ত্রকারদিগের ব্যবস্থা।" "গরু কোরবানি না হইয়া ছাগলও কোরবানি হইতে পারে। তাহাতেও ধর্ম রক্ষা হয়।"
এই প্রবন্ধ লেখার পর মীর মোশারাফ হোসেন প্রবল নিন্দার সম্মুখীন হন। তাঁর নামে ফতোয়া জারি হয়। ধর্মসভা ডেকে তাঁকে কাফের এবং তাঁর স্ত্রীকে হারাম জারি করা হয়। তাঁকে বলা হয় 'তওবা' করতে।
ক্ষুব্ধ লেখক প্রথমে একটি মামলা দায়ের করলেও পরে ব্যাপারটি আপসে মিটিয়ে নেন। কিন্তু গো-জীবন এর পরবর্তীকালে আর ছাপা হয়নি
গাে-জীবন : মডেল প্রশ্ন
Be Connected with us: Facebook Page Or Join to Our Facebook Goup